বছরজুড়ে মহামারীর ছোবলে সারাবিশ্বের মত ফেনীতেও ছিলো উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। বিদায়ী বছরটিতে করোনা কেড়ে নিয়েছে এ জেলার অনেক জ্ঞানী-গুনী ব্যক্তিদের। মহামারীর এ ভয়াবহতায়ও থেমে থাকেনি অপরাধ। বেশ কিছু ঘটনায় ফেনী ছিলো আলোচিত এবং সমালোচিত। সেসব থেকে অল্প কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য। যে ঘটনাগুলো নাড়া দিয়েছিলো দেশবাসীকে।
লাইভে এসে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা
ন্যাক্কারজনক এ ঘটনাটি ঘটেছে গেল বছরের এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ। ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন স্বামী। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর স্বামী ওবায়দুল হক টুটুলকে (৩২) আটকও করেছে পুলিশ। ফেনী পৌরসভার উত্তর বারাহীপুর ভূঁইয়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও গৃহবধূর বোন রেহানা আক্তার জানিয়েছেন, পাঁচ বছর আগে কুমিল্লার গুণবতী এলাকার আকদিয়া গ্রামের সাহাবুদ্দিনের মেয়ে তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে ওবায়দুল হক টুটুলের প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয়।কিন্তু বিয়ের পর থেকে আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে তাদের পরিবারের মাঝে প্রায় সময় ঝগড়া হয়ে আসছিল। এরইমধ্যে স্বামী টুটুল মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকাও নেয় কিন্তু আরও টাকা চাইলে তারা অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায় দুপুরে ফেসবুক লাইভে এসে স্বামী টুটুল তার স্ত্রীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে হত্যাকারী টুটুল নিজেই পুলিশকে মুঠোফোনে খবর দিলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা ও ফেসবুকে প্রচার চালানো মোবাইল জব্দ করা হয়।
তাহমিনা আক্তারের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, মামলাটি এখনও ফেনী জজকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। জানুয়ারীর ১৩ তারিখ সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে। করোনার মত মহামারীর সময়ে এমন ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছিলো নারীবাদীসহ সকল মানবাধিকার কর্মীদের।
করোনায় দেশের একমাত্র সিভিল সার্জনের মৃত্যু:
করোনা মহামারীতে দেশের একমাত্র সিভিল সার্জনের মৃত্যু হয় ফেনীতে। চলতি বছরের ৭ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন মারা গেছেন। করোনা মহামারীর সময়ে তিনি সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করেছেন এ জেলার মানুষের জন্য। আর তখন আক্রান্ত হন। শেষে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ‘ডা. সাজ্জাদ হোসেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ২৫তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তিনি ফেনী জেলার লেমুয়া ইউনিয়নের কৃতি সন্তান । তার মৃত্যুতে পুরো জেলায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে প্রকৌশলীর মরদেহ:
ফেনী শহরের পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিসের মনির উদ্দিন সড়কের তাসপিয়া ভবনের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে মো. ইউনুছ বাবু (২২) নামে এক যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।শনিবার (১০ অক্টোবর) রাত পৌনে ১১টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আতোয়ার রহমান, ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন, ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুদীপ রায়সহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহতাব মুন্না।
মৃত ইউনুছ চীনের আহোট ইউনিভার্সিটিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করতেন। তিনি শহরের শাহীন একাডেমী সড়কের একটি বাসায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি সোনাগাজীর তাকিয়া বাজারের পাইকপাড়ার সওদাগর বাড়ি।
স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার (৯ অক্টোবর) ওই ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে গুরতর আহতাবস্থায় মো. শাহরিয়ার নামে অপর এক যুবককে উদ্ধার করা হয়। ভবনের কেয়ারটেকার মোজাম্মেল হক শাহিন তাদের দুজনকে কুপিয়ে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে তিন যুবকের মধ্যে সমকামিতার সম্পর্ক রয়েছে। তবে এটি মানতে নারাজ নিহত ইউনুছ বাবুর মা রেজিয়া বেগম।
ধর্ষণ বিরোধী লংমার্চে হামলা:
বছরের অক্টোবর মাসে এসে আরেকটি ঘটনা ফেনীকে করেছিলো আলোচিত-সমালোচিত। দেশব্যাপী ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে শাহবাগ থেকে নোয়াখালীর একলাশপুরগামী লংমার্চে হামলার ঘটনা ঘটেছিলো এদিন। এতে আহত হয়েছিলো প্রায় ২৫ জন। সমাবেশ শেষে শনিবার (১৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফেনী শহরের কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে লংমার্চে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীরা সমাবেশ করেন।লংমার্চে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীরা বলেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সমাবেশ ও প্রচারাভিযান করে ফেনী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় গেলে কয়েকজন সন্ত্রাসী লাঠি নিয়ে হামলা করে। এর আগে শহরের শহীদ মিনারের পাশে দোয়েল চত্বরে সমাবেশ চলাকালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবির উপর লাল রং লাগিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য লেখাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে লংমার্চকারীদের তর্কাতর্কি হয়।