লেবুর যে বিজ্ঞান আছে সেটা আমরা কমবেশি সবাই জানি। সাধারণ বিজ্ঞান হলো, লেবু ভিটামিন সি যুক্ত টক জাতীয় ফল। বিজ্ঞানের আরও ভেতরে প্রবেশের আগে একটি গল্প বলি।
স্কার্ভি রোগ হয় ভিটামিন সির অভাবে। লেবু হচ্ছে ভিটামিন সির খুব ভালো উৎস। শুধু ভিটামিন সি-ই নয়। লেবুতে আছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, কে, কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, রিবোফ্লোবিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাস। এতে কোনো সম্পৃক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল নেই। ক্যালরি আছে খুব কম মাত্রার। ভিটামিন সি শুধু যে রোগ সারায়, তা-ই নয়। এটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে। নিয়মিত লেবু খাওয়ার ফলে ওজন কমে, নখ ও ত্বক সুন্দর থাকে, পাকস্থলী সুস্থ থাকে। এ ছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রোগ সারাতে লেবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার তথ্যটির জন্যই এই করোনাকালে মানুষ লেবুপানির প্রতি ঝুঁকেছে বেশি। এমন নয় যে বাঙালি লেবু খেত না। বাঙালির খাবার পাতে লেবুর উল্লেখ পাওয়া যায় বহু আগে থেকেই।
পনেরো শতকের কবি বিজয়গুপ্ত তাঁর ‘পদ্মাপুরাণ’ কাব্যে কমলা, নারঙ্গ, লেবু, ছোলঙ্গ, পাতি লেবু, কাগজি লেবু ইত্যাদির উল্লেখ করেছেন। এগুলো সবই মূলত লেবু ও লেবুজাতীয় ফল। এই লেবুজাতীয় ফলগুলো ১৭টি প্রজাতিতে বিভক্ত। তবে এর মধ্যে বেশির ভাগই বন্য প্রজাতির। লেমন, লাইম, সাইট্রোন, ম্যান্ডারিন অরেঞ্জ, সুইট অরেঞ্জ, পামেলো—সাধারণত এই কয়েকটি প্রজাতির লেবু ও লেবুজাতীয় ফল আমরা খেয়ে থাকি।
আমাদের অতি পরিচিত ও প্রিয় কাগজি লেবু লাইম প্রজাতির, শরবতি লেবু সুইট লাইম প্রজাতির। পাতি লেবু, কলম্ব, এলাচি, সিডলেস (বিচিহীন) লেবু হচ্ছে লেমন। জামির এবং এর সহোদর জারা লেবু সাইট্রোন প্রজাতির। কমলালেবু মান্ডারিন অরেঞ্জ এবং মাল্টা সুইট অরেঞ্জ প্রজাতির আর জাম্বুরা বা বাতাবি লেবু পামেলো প্রজাতির ফল। সাতকড়া হচ্ছে সাইট্রাস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত লেবুজাতীয় সবজি। এ ছাড়া বারি লেবু ১, বারি লেবু ২, বারি লেবু ৩, বারি লেবু ৪, বারি লেবু ৫ এবং বারি কাগজি লেবু ১ নামের উচ্চফলনশীল লেবুর জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই সব ফলকেই আমরা ‘লেবু’ হিসেবে চিনি এবং নিয়মিত খেয়ে থাকি।